ট্রেডিশনাল ব্যবসায় (Traditional business ) ট্রেডিশনাল ব্যবসায় বলতে রিটেইল সুপারমার্কেট অথবা শো-রুমকে বোঝানো হয়ে থাকে। সেখান থেকে আঞ্চলিকভাবে ক্রেতাদের নিকট পণ্য বা সেবা সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যবসায়ে পরিচালনাগত ব্যয় অত্যধিক। কেননা এক্ষেত্রে শো-রুম অথবা স্টোর খরচ বিদ্যমান। এছাড়া ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের জন্য কোনো না কোনো শো-রুম বা দোকানে যেতে হয়।
ই-ব্যবসায় বা ই-বিজনেস হলো ব্যবসায়ের একটি নতুন মাত্রা বা ধরন। ই-বিজনেস ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত তা হলো— অনলাইনের মাধ্যমে পরিকল্পনা, সংগঠন, পণ্য প্রস্তুত এবং মার্কেটিং। বর্তমানে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক উপায়ে এ ধরনের ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক সব কাজ ইলেকেট্রনিক উপায়ে অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
ই-বিজনেস-এর বৈশিষ্ট্য—
১. সহজ গঠন
২. ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা নেই
৩. কম খরচ
৪. সময়ের পর্যাপ্ততা
৫. মার্কেটিং কৌশলে কম খরচ
৬. ই-বিজনেস সরকারি ভর্তুকি গ্রহণ করে
৭. এখানে কিছু নিশ্চয়তা বিদ্যমান
৮. ব্যক্তিগত যোগাযোগের অস্বিত্ব নেই
৯. ক্রেতা-বিক্রেতা সরাসরি একত্রিত হয় না
১০. পণ্য সরবরাহে বিলম্ব
১১. বিশ্বের যে কেউ যেকোনো প্রান্ত থেকে এ ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারে।
১২. আর্থিক ঝুঁকির পরিমাণ অত্যধিক।
ট্রেডিশনাল ব্যবসায় | ই-ব্যবসায় |
---|---|
এটি গঠন করা তুলনামূলক কঠিন | এটি গঠন করা সহজ |
এ ধরনের ব্যবসায় গঠন করতে মার্কেটপ্লেসের দরকার হয়। | এক্ষেত্রে মার্কেট প্লেস এর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। |
এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মূলধনের প্রয়োজন। | এক্ষেত্রে নামমাত্র মূলধন দিয়েই ব্যবসায় শুরু করা যায়। |
এক্ষেত্রে অসংখ্য মানবসম্পদ প্রয়োজন। | এক্ষেত্রে নামমাত্র মানবসম্পদ হলেই চলে । |
সবক্ষেত্রে ক্রেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। কেননা মধ্যস্থব্যবসায়ী বিদ্যমান। | ই-ব্যবসায়ে ক্রেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে। |
এ ধরনের ব্যবসায়ে ঝুঁকি তুলনামূলক কম। | এক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি। |
ট্রেডিশনাল ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধি সীমিত। | ই-বিজনেসের আওতা বা পরিধি পুরো বিশ্বব্যাপী। |
সময়, সুযোগ ও পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে না পারলে যে কোনো প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে ছিটকে পড়বে। করোনা মহামারিতে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো যখন টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছিল তখনই নতুন সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। আর ব্যবসায়ের এই নতুন ধরন বা সুযোগের নামই হলো ই-বিজনেস। ট্রেডিশনাল ব্যবসায় থেকে কেন ই ব্যবসায়ে আসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. তুলনামূলক খরচ কম : ই-বিজনেসের পরিচালনা খরচ খুবই কম।
২. বিশ্বব্যাপী বাজার : ই-বিজনেস জনপ্রিয় হবার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এর বাজার পরিধি। পুরো পৃথিবী জুড়ে এ ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।
৩. সহজে ও দ্রুত ক্রেতাদের ফিডব্যাক পাওয়া যায় : ই-বিজনেস প্রক্রিয়ায় ইন্সটেন্ট ক্রেতাদের সাড়া পাওয়া যায়।
৪. সময় এবং খরচ কম: ট্রেডিশনাল ব্যবসায় থেকে ই-বিজনেসে আসার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো ক্রেতাদের সাথে কম সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করা যায়।
৫. সহজ গঠন : যে কেউ বাড়িতে বসেই ই-বিজনেস গঠন করে এ ধরনের ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারে।
৬. সরকারি ভর্তুকি : ই-বিজনেস পরিচালনায় আগ্রহী ও উৎসাহী হতে সরকার অনলাইন ব্যবসায়ে এখন ভর্তুকি প্রদান করছে।
৭. কম মূলধন : ই-বিজনেস পরিচালনায় নামমাত্র মূলধনের প্রয়োজন পড়ে।
৮. ইন্টারনেট জ্ঞান : ই-বিজনেস পরিচালনায় ইন্টারনেট জ্ঞান থাকলেই চলে।
৯. ক্রেতা আকর্ষণ : অনলাইন বিজনেসে সহজেই ক্রেতাকে আকর্ষণ করা যায়।
১০. সবসময়ের জন্য খোলা : ই-বিজনেস ২৪/৭ দিন ভিত্তিতে পরিচালনা করা যায়।
▪️বাংলাদেশে ট্রেডিশনাল ব্যবসায়ের পাশাপাশি ই-বিজনেস করছে এমন কিছু ব্যবসায়ের নাম উল্লেখ করো ।
বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিচালনাকারী কিছু বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আছে যারা ট্রেডিশনাল পদ্ধতিতে ব্যবসায় শুরু করেছিল। বর্তমান আধুনিক ব্যবসায় জগতে বাজার ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রেডিশনাল ব্যবসায়ের পাশাপাশি ই-বিজনেসও শুরু করেছে। যেমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হলো— স্বপ্ন চেইন শপ, ওয়ালটন ইলেক্ট্রনিকস্, সিঙ্গার, প্রথম আলো প্রভৃতি।